সরকার দলীয় কিছু নেতার যোগসাজসে গভীর গর্ত করে মাটি উত্তোলন করে একটি প্রভাবশালী মহল দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
এদিকে মাটি উত্তোলনের অভিযোগ পেয়ে উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন এলাকার ১৮ ব্যক্তির ৪০টি খননযন্ত্র এবং প্রায় দুই লাখ মিটার পাইপ ধ্বংস করেছে। এছাড়া গোয়ালন্দ ঘাট থানায় আটজনকে অভিযুক্ত করে মামলা করেছে।
বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) রুবায়েত হায়াত শিপলুর নেতৃত্বে উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের দুর্গম অঞ্চল মজলিশপুর চরে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করা হয়।
এসময় ওই এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে স্থাপিত আরও ৪টি স্যালো ইঞ্জিন চালিত খননযন্ত্র ধ্বংস ও পুড়িয়ে দেয়া হয়। একই সাথে আরও প্রায় ৫০ হাজার ফুট পাইপ ধ্বংস করা হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার দক্ষিণ দৌলতদিয়ার রবিউল্লাহ বেপারী পাড়ায় মরা পদ্মা নদীতে গভীর গর্ত করে মাটি উত্তোলন করায় নদীর পাড়সহ ফসলি জমি ধসে গেছে।
স্থানীয় তোমছের মাতুব্বর পাড়ার বাক প্রতিবন্ধী নুরুল ইসলাম ও তার ভাই আব্দুল মজিদের প্রায় ৫ বিঘা আবাদি কৃষি জমি গভীর গর্তে ধসে গেছে। বর্তমানে প্রায় চার বিঘার মতো জমিতে ধান, পাট ও তিল রয়েছে। বাকপ্রতিবন্ধী দুই ভাই আহাজারির ভঙ্গিতে ক্ষতির চিত্র বোঝানোর চেষ্টা করেন।
নুরুল ইসলামের স্ত্রী রোকেয়া বেগম বলেন, তাদের ১০ বিঘার মতো জমিতে ধান, তিল, গম, সরিষা ও পাটের আবাদ ছিল। দুই-তিন বছর ধরে মাটি উত্তোলন করায় জমি ধসতে থাকায় ৫ বিঘা বিলীন হয়েছে। এ বছর এখন তাদের প্রায় চার বিঘার মতো জমি রয়েছে। অথচ এই জমির ওপর নির্ভর করে সারা বছর সংসার চালাতে হয়।
গত মঙ্গলবার বাকপ্রতিবন্ধী আব্দুল মজিদের স্ত্রী নাছিমা বেগম বাদী হয়ে ৮ জনকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা করেছেন।
প্রতিবেশী বাবু প্রামানিক বলেন, তিনি ৫ বিঘা জমির ভুট্টা আবাদ করেছেন। খননে বাকপ্রতিবন্ধী নুরুল ইসলাম ও আব্দুল মজিদের অনেক জমি বিলীন হয়ে এখন আমার জমির কাছে চলে এসেছে। ফের মাটি উত্তোলন শুরু হলে এই জমিও বিলীন হয়ে যাবে।
স্থানীয় আব্দুর রহিম মোল্লা বলেন, গভীর গর্ত করে মাটি উত্তোলন করায় তার এক বিঘা জমির তিল খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দীর্ঘদিন মাটি উত্তোলনে প্রায় ৫০-৬০ ফুট করে গভীর রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এলাকার প্রায় ৬০ বিঘা জমি।
ভুক্তভোগীরা জানায়, প্রায় ৩-৪ বছর আগে উজানচরের গায়ান পরিবার মাটি উত্তোলন শুরু করলে পাশের জমি ধসলে বারণ করা হয়। কর্ণপাত না করে স্থানীয় ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহরাব শেখ, কুদ্দুস মাঝি, সুলতান, পৌরসভার সমুন শেখ, আব্দুস সালাম, দৌলতদিয়ার উম্বার কাজী মাটি কাটা অব্যাহত রাখে।
অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা সোহরাব হোসেন বলেন, ‘চার বছর আগে মাটি কেটেছি। এখন মাটি কুদ্দুস ও সুলতান কাটে।’
আরেক যন্ত্রের মালিক আব্দুস সালাম বলেন, ‘জমির মালিকদের থেকে মাটি কিনেই কেটেছিলাম। এর বাইরে কারও জমি ধসে গেলে জানা নেই, কাউকে হুমকি দেইনি। ’
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিকুর রহমান বলেন, ‘অবৈধভাবে মাটি উত্তোলনের অভিযোগ পেয়ে সোমবার মরা পদ্মা থেকে তিনটি যন্ত্র জব্দ করেছি। দুই বাকপ্রতিবন্ধীর ফসলি জমি বিলীন দেখে নিজের কাছেই খুব কষ্ট লাগছে। ’
ইউএনও রুবায়েত হায়াত বলেন, করোনার কারণে প্রশাসন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, লকডাউন বাস্তবায়ন ও প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যস্ত রয়েছে। এ সুযোগে কিছু দুষ্টচক্র অবৈধভাবে বালু-মাটি উত্তোলনের জন্য খননযন্ত্র পরিচালনার চেষ্টা করছে।
‘খবর পেয়ে গত দুদিনে ১৮ ব্যক্তির ৪০টি খননযন্ত্র ও প্রায় দুই লাখ মিটার পাইপ ধ্বংস করেছি’ উল্লেখ করে ইউএনও বলেন, ‘অবৈধভাবে বালু-মাটি উত্তোলনের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’